ইসলামে কথা বলার আদব কায়দা শিষ্টাচার

Trickbd Free এর পক্ষ থেকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন আজকে আমরা জানবো ইসলামে কথা বলার আদব কায়দা/ কোরআনের আলোকে কথা বলার আদব কায়দা/কথা বলার সাধারন আদব কায়দা।

কোরআনের আলোকে কথা বলার আদব কায়দা Etiquette of speaking in the light of the Qur'an
কোরআনের আলোকে কথা বলার আদব কায়দা 

ইসলামে কথা বলার আদব কায়দা 

কথা বলার আগে সালাম দেওয়া 

 ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন তোমরা কোনো ঘরে প্রবেশ করবে তখন তোমরা পরস্পরের প্রতি সালাম করবে অভিবাদনস্বরূপ, যা আল্লাহর কাছ থেকে কল্যাণময় ও পবিত্র।’ (সুরা : নুর, আয়াত : ৬১)


কথাবার্তায় সতর্ক হওয়া 

 মানুষের প্রতিটি কথা রেকর্ড হয়। সুরা কাফ-এর ১৮ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘সে যে কথাই উচ্চারণ করে তার কাছে সদা সংরক্ষণকারী উপস্থিত রয়েছে।’তাই সদা উত্তম কথা বলা এবং কারো সঙ্গে কথাবার্তা উত্তম বিষয়ে হওয়া উচিত। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে লোক আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভালো কথা বলে অথবা চুপ থাকে।’ (বুখারি, হাদিস : ৬০১৮)


সুন্দরভাবে ও উত্তমরূপে কথা বলা 

সুরা বাকারার ৮৩ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘...তোমরা মানুষের সঙ্গে সদালাপ করবে।


কণ্ঠস্বর নিচু করে কথা বলা 

 সুরা লোকমানের ১৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘আর তুমি তোমার কণ্ঠস্বর নিচু করো; নিশ্চয়ই কণ্ঠস্বরের মধ্যে গর্দভের সুরই সবচেয়ে অপ্রীতিকর।’ অর্থাৎ তোমাদের স্বর ক্ষীণ করো, প্রয়োজনাতিরিক্ত উচ্চ কোরো না। আর চতুষ্পদ জন্তুসমূহের মধ্যে বিকট ও শ্রুতিকটু শব্দওয়ালা গাধার চিৎকারের মতো করে কথা বলো না। (তাফসিরে ইবনে কাসির)


সঠিক কথা বলা 

সুরা আহজাবের ৭০ ও ৭১ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘হে ঈমানদাররা, তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করো এবং সঠিক কথা বলো; তাহলে তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের কাজ সংশোধন করবেন এবং তোমাদের পাপ ক্ষমা করবেন।’


নম্র কথায় শত্রুকে মোকাবেলা করা 

সুরা হা-মিম সাজদাহর ৩৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘আর ভালো ও মন্দ সমান হতে পারে না। মন্দ প্রতিহত করো তা দিয়ে যা উত্কৃষ্ট; ফলে তোমার ও যার মধ্যে শত্রুতা আছে, সে হয়ে যাবে অন্তরঙ্গ বন্ধুর মতো।’


 কথা ও কাজের মিল থাকা 

সুরা ছফ-এর ২ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘হে ঈমানদাররা,তোমরা যা করো না,তা তোমরা কেন বল?’


মূর্খ ও অজ্ঞদের এড়িয়ে চলা 

সুরা ফোরকানের ৬৩ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,‘এবং রহমানের বান্দা তারাই,যখন মূর্খ লোকেরা তাদের (অশালীন ভাষায়) সম্বোধন করে, তখন তারা বলে, সালাম।’


পৃথিবীতে মানুষ যত বিপদের সম্মুখীন হয়, তার বেশির ভাগ কথার সঙ্গে সম্পৃক্ত। পাশাপাশি এর পরকালীন অনিষ্ট তো আছেই। তথাপি একজন সামাজিক জীব হিসেবে মানুষকে কথা তো বলতেই হবে। নিজের প্রয়োজন যেমন তাকে অন্যের কাছে ব্যক্ত করতে হয়, তেমনি অন্যের প্রয়োজনেও তাকে এগিয়ে আসতে হয়। এ ক্ষেত্রে কথা বলার কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু কথা বলার ক্ষেত্রেও মুমিনকে কিছু আদব-কায়দা বা শিষ্টাচার মেনে চলার নির্দেশনা পবিত্র কোরআন দিয়ে রেখেছে।তাই চলুন পবিত্র কোরআনের নির্দেশনা জেনে নেওয়া যাক।


কোরআনে কথা বলার আদব

১. কথা বলার পূর্বে সালাম দেয়া। সুরায়ে নূরঃ ৬১ 

২. সতর্কতার সাথে কথা বলা, কেননা প্রতিটি কথা রেকর্ড হয়। সুরায়ে কাফ: ১৮ 

৩. সুন্দরভাবে ও উত্তমরূপে কথা বলা। সুরায়ে বাক্বারাহ: ৮৩ 

৪. অনর্থক ও বাজে কথা পরিহার করা। সুরায়ে নূর: ৩
 
৫. কন্ঠস্বর নিচু করে কথা বলা। সুরায়ে লোকমান: ১৯ ও সুরায়ে হুজরাত: ২-৩ 

৬. বুদ্ধি খাটিয়ে কথা বলা। সুরায়ে নামল: ১২৫ 

৭. সঠিক কথা বলা ও পাপ মোচনের দোয়ার উন্মুক্ত করা। সুরায়ে আহযাব: ৭১-৭২ 

৮. গাধার মত কর্কশ স্বরে কথা না বলা। সুরায়ে লোকমান: ১৯ 

৯. উত্তম কথা বলে শত্রুকেও বন্ধুতে পরিণত করা। সুরায়ে হা-মীম 

১০. উত্তম কথায় দাওয়াত দেয়া। সুরায়ে হা-মীম সাজদাহ: ৩৪ 

১১. ঈমানদারদের কথা ও কাজ এক হওয়া। সুরায়ে ছফ: ২ সাজদাহঃ ৩৪ 

১২. পরিবারের সদস্যদের প্রতি ক্ষমারনীতি অবলম্বন করা। সুরায়ে আ'রাফ: ১৯৯ 

১৩. মেয়েরা পর-পুরুষের সাথে ইনিয়ে-বিনিয়ে আহলাদীভাবে কথা না বলা তবে সুন্দর ও ভদ্রভাবে কথা বলা। সুরায়ে আহযাব: ৩২ 

১৪. মূর্খ ও অজ্ঞদের সাধ্যমত এড়িয়ে চলা। সুরায়ে ফুরকান: ৬৩ 

১৫. সকল মানুষের সাথে সুন্দর করে কথা বলা। সুরায়ে বাক্বারাহ: ৮৩

সর্বশেষে বলতে চাই যে আসুন, আমরা জীবনে চলার পথের প্রতিটি ধাপে পবিত্র কোরআনের আলোকে জীবন পরিচালনা করি।কোরআনের আইন অনুযায়ী কথাবার্তা পরিচালনা করি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাওফিক দান করুন। আমিন।

কথা বলার কতিপয় সাধারণ আদব 


১) ভালো কথা বলা অথবা নীরব থাকা। বাচাল লোক সবার অপ্রিয়। 

২) কারো অনুপস্থিতে তার সমালোচনা না করা। 

৩) কাউকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে কথা না বলা 

৪) কারো অপছন্দনীয় নাম বা উপাধি ধরে না ডাকা 

৫) গালাগালি ও অভিশাপ দেয়া থেকে বিরত থাকা। 

৬) সত্য কথা বলা। মিথ্যা না বলা (হাসির ছলে হলেও) | 

৭) নোংরা ও অশ্লীল কথা বার্তা সর্বদা ঘৃণ্য। 

৮) কথা বলার ক্ষেত্রে বড়দেরকে অগ্রাধিকার দেয়া । 

৯) শ্রোতার বোধগম্য করে ধীরস্থিরতার সাথে কথা বলা। 

১০) নরম ভাষায় কথা বলা । (তবে নারীগণ পরপুরুষের সাথে নরম স্বরে কথা বলা হতে বিরত থাকবে) 

১১) অযথা চিৎকার করে কথা না বলা। 

১২) অন্যের কথা বলার মাঝে কথা না বলা । 

১৩) কথায় কথায় কসম না খাওয়া। 

১৪) না জেনে বা নিশ্চিত না হয়ে কথা বলা থেকে বিরত থাকা।


পোস্টে কোথাও ভুল ক্রুটি হলে ক্ষমা করবেন সকল প্রকার টিপস এবং ট্রিক পেতে আমাদের ওয়েবসাইট Trickbd Free এর সাথেই থাকুন। আল্লাহ হাফেজ। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url